ধানখালী ইউনিয়নের মরিচবুনিয়া গ্রামের হতদরিদ্র পিতা আনোয়ার হাওলাদারের ছেলে সোহান। ভোকেশনাল (নবম শ্রেণি) বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য গত দুই মাস যাবৎ প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। বৃহস্পতিবার সকালে সহপাঠীদের সঙ্গে উপজেলার সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিতে আসে সে। কিন্তু কেন্দ্রে পৌঁছে জানতে পারে, তার প্রবেশপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পাদনই করেননি বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক হাসান।
শিক্ষার্থীর পরিবারের অভিযোগ, পাচজুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক মো. হাসান রেজিস্ট্রেশনের সময় সোহানের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা নেন। এরপর পরীক্ষার আগে অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা না দেওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন সোহান। ফলে কেন্দ্রের বাইরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে সে।
সোহানের চাচা মো. ওমর ফারুক জানান, “রেজিস্ট্রেশন ফি দেওয়ার পরও অতিরিক্ত দশ হাজার টাকা চেয়ে বসেন শিক্ষক হাসান। টাকা না দেওয়ায় আমার ভাতিজার এক বছর নষ্ট করে দিলেন তিনি।”
সংবাদকর্মীদের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই শিক্ষক দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ধানখালী পাচজুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার সব কার্যক্রম নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। বিদ্যালয়ের রেজুলেশন বই, শিক্ষার্থী আইডি-পাসওয়ার্ডসহ সব প্রশাসনিক নথিও তার হাতে রয়েছে। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক কুতুবউদ্দিন বলেন,
> “আমি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর বিষয়টি জানতে চাইলে হাসান আমাকে হুমকি দেন। ইউএনও স্যার ও শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারাও বিষয়টি জানেন। কিন্তু রেজুলেশন বই ফেরত দেয়নি হাসান।”
অভিযুক্ত শিক্ষক হাসান বর্তমানে আমতলী উপজেলার টেপুরা আহম্মাদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। তিনি বলেন,
> “একটা পরীক্ষা গেছে, সমস্যা নাই—আগামী বছর দেবে। ওই প্রতিষ্ঠান আমার টাকায় করেছি, তাই আমি চালাই।”
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন,
> “পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে ঘটনাটি জেনেছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ইউএনও স্যার বিষয়টি অবগত হয়েছেন। দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ভোকেশনাল কার্যক্রমের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে দরিদ্র পরিবারগুলোর সন্তানরা প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।